জিয়ানলুইজি বুফন - গোলবারের এক অতন্দ্র প্রহরী




১৯৭৮ সালের জানুয়ারির ২৪ তারিখে ইতালির কেরারা শহরে জন্মগ্রহন করেন জিয়ানলুইজি বুফন। জিজি নামে চেনে যাকে সবাই। জন্মের আগেই যে খেলোয়াড় হওয়ার নিয়তি লেখা ছিল তার কপালেপুরো পরিবারটাই যেন একটা খেলার দল! মা তিনবারের সেরা ইতালিয়ান চাকতি নিক্ষেপকারী। বাবাও ছিলেন অ্যাথলেট। দুই বোনের দুজনই ভলিবল খেলতেন ইতালির হয়ে। মামা-চাচা পর্যন্ত ঘাঁটলে পরিবারের স্টেডিয়ামমুখী সদস্যের সংখ্যাটা কেবল বাড়ে।



বুফনও যে বড় হয়ে খেলাটাই পেশা হিসেবে নেবেন তাতে সন্দেহ ছিল না। ১০ বছরের ছোট্ট বুফনকে তাই ভর্তি করিয়ে দেয়া হল ফুটবল একাডেমিতে। তবে গোলকিপার হিসেবে নয়, আজকের বিশ্বের অন্যতম সেরা এই গোলকিপার খেলা শুরু করলেন মিডফিল্ডার হিসেবে।
বছর দুই বাদে জিজি আবিষ্কার করেন নিজেরআইডল ইতালিতে চলা বিশ্বকাপের সময়। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুনের গোলকিপার থমাস এনকোনোকে দেখে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন বুফন! মিডফিল্ডার নয়, গোলকিপারই হবেন তিনি!


পারমা ফুটবল ক্লাবের যুব দলে ১৩ বছর বয়সে ১৯৯১ সালে খেলা শুরু করেন, এরপর ১৯৯৫ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পারমার সিনিয়র দলে খেলেন। এসময় তিনি ক্লাবের হয়ে ইউয়েফা কাপ, ইতালিয়ান কাপ এবং ইতালিয়ান সুপার কাপ জেতেন। এছারাও ১৯৯৭ সাল থেকে তিনি ইতালি জাতিয় ফুটবল দলের সদস্য হয়ে জান।
 বেশ কয়েক মৌসুম ধরে ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলা বুফনকে সেসময়ের গোলকিপারের দলবদলের বিশ্বরেকর্ড গড়ে ৫২ মিলিওন ইউরো এর বিনিময়ে নিজেদের দলে ভেরায় জুভেন্টাস। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত জুভেন্টাসেই রয়েছেন তিনি। জুভেন্টাসের হয়ে প্রায় সব ধরনের ট্রফি ছুয়ে দেখা হয়ে গেছে বুফনের তবে শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফিটাই থেকে গেছে অধরা।



ক্লাবের সাথে সাথে জাতিয় দলের হয়েও তিনি ছিলেন গোলবারের নিচে অতন্দ্র প্রহরি হয়ে। ইতালির হয়ে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ, ২০১২ সালে ইউয়েফা ইউরোপিয়ান কাপের রানার আপ, এবং ২০১৩ সালের ফিফা কনফেডারেসন কাপের ব্রোঞ্জ মেডেল অর্জন করেন তিনি।
এছারাও বেক্তিগতভাবে তার অর্জন অসামান্য , এর মধ্যে ব্যালন ডি অর এর রানার আপ , বেস্ট ফিফা গোলকিপার , ইউয়েফা ইউরো অল টাইম একাদসে জায়গা, গোল্ডেন ফুট, সিরিয়া টিম অফ দা ইয়ার, সিরিয়া বেস্ট গোলকিপার অফ দা ইয়ার, জুভেন্টাসের মোস্ট ভেলুয়াবল প্লেয়ার এর পুরুস্কার উল্লেখযোগ্য।



গোলবারের এই অতন্দ্র প্রহরী জাতীয় দলকে জানিয়ে দিলেন বিদায় অনেকটা আক্ষেপের সাথেই, শুভ হোক তার আগামিদিনের পথচলা 

চাইলে দেখতে পারেন ভিডিও আকারেও এখান থেকে -  



থমাস আলভা এডিশন এর জীবনী [ সম্পূর্ণ বাংলায় ]

তিনি নাকি অন্ধকারকে খুব ভয় পেতেন, এই ভয় দূর করতেই কিনা কে জানে শেষমেষ বাতিই আবিস্কার করে বসলেন!!
থমাস আলভা এডিশন


বন্ধুরা স্বাগত জানাচ্ছি নেটজগতে। অনেকদিন পর আবার আপনাদের সামনে হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো বিজ্ঞানী থমাস আল্ভা এডিশন এর জীবনী।
তো চলুন শুরু করা যাক-

১৮৫৭ সালের ১১ ফেব্রয়ারি আমেরিকার ওহিও রাজ্যের মিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন টমাস আলভা এডিসন। ছোট থেকেই অন্ধুসন্ধিৎসু মন থাকলেও বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ফ্যারাডের মতো তিনিও অংকে নিতান্ত কাঁচা ছিলেন। বাবা চাইতেন ছেলে সাহিত্যিক হোক। তাই সে কালের বিভিন্ন রুচিশীল সাহিত্যের বই তিনি নিয়মিত ছেলের জন্য নিয়ে আসতেন। অতটুকু ছেলের সঙ্গে সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও আলোচনা করতেন। তবে এডিসনের সব চেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল বিজ্ঞান, বিশেষ করে রসায়ন। ছোটবেলাতেই নিজে নিজে একটি ল্যাবরেটরিও তৈরি করেছিলেন। পিতার কাছ থেকে এডিসন যা হাতখরচ পেতেন তাতে তাঁর ল্যাবরেটরির খরচ জোগানো কঠিন হয়ে যেত, তাই তিনি শুরু করলেন ফেরি করা। ট্রেনে ফেরি করে তিনি বাদাম, চকলেট ইত্যাদি বিক্রি করতেন। পরে শুরু করেন সংবাদপত্র বিক্রি করা। সমসাময়িক সময়ে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ চলছিল। খবরের চাহিদা বেশি হওয়ায় নিজেই একটি পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করলেন। নাম দিলেন হেরাল্ড। মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে তিনি এই কাজ শুরু করেন। অনেক টাকা লাভ হলেও এডিসনের হাত প্রায়ই খালি থাকত। ল্যাবরেটরিতে গবেষণা ও বই কেনার পিছনেই তাঁর বেশিরভাগ টাকা খরচ হয়ে যেত। রেলে খবরের কাগজ বিক্রি করতে গিয়ে তিনি দেখলেন একটি খালি কামরা অব্যবহৃত পড়ে আছে। তখন সেটাকেই তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে নিজের ল্যাবরেটরিতে রূপান্তর করলেন। এখানে কাজ করতে করতেই তিনি বিদ্যুৎ শক্তি সম্পর্কে প্রভূত জ্ঞান অর্জন করেন। বিদ্যুৎ সম্পর্কে কৌতুহল তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল সমৃদ্ধি ও সাফল্যের চূড়ায়।



সে সময় নতুন আবিষ্কার হওয়া টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটা ত্রুটি ছিল। বহু দূরের দুই টেলিগ্রাফ কেন্দ্রের মাঝখানে যে কেন্দ্রগুলি ছিল সেগুলি আর দিক থেকে পাঠানো খবর গ্রহণ করতে ও তাতে পরিবর্তন করতে পারত। ফলে গোপনীয়তা বলতে কিছু থাকত না। এডিসন এই ত্রুটিটি ঠিক করে দিয়েছিলেনসে কালে টেলিগ্রাফ যন্ত্রের একটি তার দিয়ে একটি খবরই পাঠানো যেত। এডিসন এক সঙ্গে অনেকগুলো খবর বিকৃতি ছাড়া পাঠানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। টেলিগ্রাফ সম্পর্কিত গবেষণা করতে করতে তিনি পাশাপাশি আরও কয়েকটি নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এ রকমই একটি যন্ত্রের নাম ‘রেমিংটন টাইপরাইটার’। কিছু দিন পর আবিষ্কার করেনমিলিওগ্রাফ’ নামের একটি যন্ত্র। এটি দিয়ে টাইপরাইটার বা হাতে লেখা চিঠি যত ইচ্ছা তত কপি করা যায়।

আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেলের আবিষ্কার করা টেলিফোনে কথা খুব অস্পষ্ট শোনা যেত। এডিসন কার্বন রিসিভার ও ট্রান্সমিটার আবিষ্কার করে এই ত্রুটি ঠিক করে দেন। সমসাময়িক সময়েই তিনি আবিষ্কার করেন ‘ফনোগ্রাফ’ নামক যন্ত্রটি। একটি ডায়াফ্রেমের সামনে কথা বললে সেটি কাঁপতে থাকে। এই কাঁপুনি একটি সুইচ দ্বারা নীচে রাখা ঘুর্ণায়মান মোমের সিলিন্ডারে দাগ ফেলতে থাকে। পরে সিলিন্ডারটি আবার প্রথম থেকে ঘোরালে ডায়াফ্রেমে পূর্বে উচ্চারিত কথাগুলো স্পষ্ট শোনা যায়। আধুনিক সিডি প্লেয়ারের এই প্রাথমিক ও সরল যন্ত্রটি আবিষ্কার করতে এডিসনকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।

এডিসনের সব চেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী আবিষ্কার হল বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার। আকাশের বিদ্যুতকে মানুষ তখন ব্যাটারিতে আটকাতে পেরেছিল। তার পরও কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি যে তা থেকে আলো পাওয়া সম্ভব। এডিসন নিজ মেধা ও প্রচেষ্টায় সেই অলৌকিকতাকে বাস্তব রূপ দিয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে অক্টোবর মাসে তিনি স্থানীয় পার্ক বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করে সকলকে অবাক করে দিয়েছিলেন। আধুনিক যুগের সিনেমার আবিষ্কারকও ছিলেন তিনি। ১৮৯৭ সালের ২৭ এপ্রিল নিউইয়র্কে হাজার হাজার দর্শকের সামনে এডিসন তাঁর ‘কাইনেটোস্টোপ’ নামক যন্ত্রের সাহায্যে চলমান ছবি দেখিয়েছিলেন। শিল্প জগতে জন্ম দিয়েছেন নতুন একটি যুগের। তিনি সিমেন্ট, আধুনিক সহজে বহনযোগ্য ব্যাটারি, রাবার ইত্যাদি আবিষ্কার করেছেন।
পেটেন্ট অফিস থেকে জানা যায় এডিসন তাঁর সারাজীবনে মোট ১৪০০ যন্ত্রের জন্য পেটেন্ট নিয়েছেন। এ থেকেই তাঁর প্রতিভার বিস্তৃতির পরিমাপ আন্দাজ করা যায়।

১৯২১ সালে তাঁর ৭৫ বছর পূর্ণ হয়। নিউইয়র্কের টাইমস পত্রিকা আমেরিকার মধ্যে সব চাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি কে, তা যাচাইয়ের জন্য একটি সমীক্ষা করে। ফলাফল অনুসারে দেখা যায় সব চাইতে জনপ্রিয় ব্যক্তি টমাস আলভা এডিসন। ফ্রান্সে তাঁকে দেওয়া হয় ‘কমান্ডার অব লিজিয়ন অনার’ উপাধি, ইতালিতে তাকেকাউন্ট’ উপাধি দেওয়া হয়। তাঁর নিজ দেশ আমেরিকায় তিনি দেশসেবার জন্য স্বর্ণপদক সহ বহু পুরস্কার পেয়েছেন, ভূষিত হয়েছেন বহু সম্মানজনক উপাধিতে। সরকার এডিসনের ছবি ও তাঁর আবিষ্কৃত প্রথম বৈদ্যুতিক বালবের ছবি দিয়ে ডাকটিকিট বের করেছিল।
মহান বিজ্ঞানী এডিসন মারা যান ১৯৩১ সালের ১৭ অক্টোবর। সমাপ্ত ঘটে একটি নিরলস প্রচেষ্টায় গাঁথা কর্মবহুল জীবনের। পৃথিবীতে রেখে যান অসংখ্য আবিষ্কার যা তাঁকে চিরকাল স্মরণীয় করে রাখবে।

আপনারা চাইলে সম্পূর্ণ জীবনীটি দেখতে পারেন ইউটিউব এ, এখান থেকে- 

              

আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। পরবর্তীতে নতুন কোন টিউন নিয়ে হাজির হবো। সবাই ভালো থাকুন এবং নেটজগতের সাথেই থাকুন